Reading Time: 3 minutes

কোলেস্টেরল মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়, এবং এতে আপনার সুষম খাদ্য-তালিকার এক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। তেমন কোন বিশিষ্ট লক্ষণ না দেখা গেলেও এটা ঠিক, যে কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যে সব খাবারে উচ্চ পরিমাণে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (LDL) থাকে সেগুলি এড়িয়ে চললে সেটাই হল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি রোধ করার একটি সহজ উপায়। আপনার দেহে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল থাকলে বা আপনি এটির পরিমাণ বৃদ্ধি রোধ করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে নতুন দিল্লীর সরোজ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ডায়টেটিক্স-এর বিভাগীয় প্রধান, নিধি ধাওয়ান, আমাদের কাছে যে ক্ষতিকর খাবারগুলির তালিকা দিয়েছেন সেইগুলি অবশ্যই আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে।

প্রথমেই আপনাকে যে কোনো ধরনের সরাসরি তেলে ভাজা খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজন মতো ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফ্রায়েড চিকেন, যে কোনো ধরনের চিপ্স ইত্যাদি খাবার সম্ভব হলেই এড়িয়ে চলা উচিত। এই ধরনের খাবার সরাসরি তেলে ভাজতে হাইড্রোজেনেটেড তেল ব্যবহার করা হয় যাতে ক্ষতিকর চর্বি জাতীয় পদার্থ থাকে যা শরীরে ক্ষতিকর (LDL) কোলেস্টেরল-এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।

দ্বিতীয়তঃ, আপনাকে সব ধরনের আইস ক্রিম আর শর্করা যুক্ত মিষ্টি খাবার বাদ দিতে হবে। আইস ক্রিম আর কেক, প্যাস্ট্রি ও কুকির মতো বেক করা খাবারগুলিতে অতিরিক্তভাবে যোগ করা শর্করা থাকে। অতিরিক্তভাবে যোগ করা শর্করা এবং ক্ষতিকর (LDL) কোলেস্টেরল-এর বৃদ্ধিতে যে এক রকমের যোগ-সূত্র রয়েছে তা গবেষণাতেই[1] দেখা গেছে। অতিরিক্তভাবে যোগ করা শর্করা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী  কোলেস্টেরল-এর মাত্রা HDL[2] কমিয়ে এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সফট ড্রিঙ্ক-গুলি এবং কৌটোয় সংরক্ষিত ফলের রসের মতো এই রকম শর্করা যুক্ত মিষ্টি খাবারও শরীরের ওজন বাড়ার জন্য দায়ী যা অবশেষে আপনার শরীরের কোলেস্টেরল মাত্রা বাড়াতেই সাহায্য করে থাকে।

তৃতীয়তঃ, আপনার ডিমের কুসুম খাওয়াও এড়িয়ে যাওয়া উচিত। আপনার কোলেস্টেরল উচ্চমাত্রায় বা ক্ষতিকর মাত্রার সীমারেখায় রয়েছে এমন হলে ডিমের কুসুম হল আরও এক ধরনের খাবার যা আপনার পক্ষে সম্ভব হলে না খাওয়া বা খুবই কম খাওয়া উচিত। আপনার কোলেস্টেরলের সঠিক মাত্রা বজায় রাখার জন্য আপনাকে ডিমের কুসুম খাওয়াও কিছু শারীরিক ব্যায়ামের সঙ্গে সঙ্গে একত্রে করা উচিত। আপনাকে সপ্তাহে 3টির বেশি ডিমের কুসুম না খাওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। রান্না করা ডিমের ঝোল খাওয়া এড়িয়ে চলুন এবং কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার সঙ্গে সঙ্গে শুধুমাত্র ডি্মের সাদা অংশ খাওয়া অভ্যাস করুন।

চতুর্থ ধাপে, আপনি মাখন খাওয়াও এড়িয়ে চলুন। জলখাবার থেকে প্রাতঃরাশে যা আমরা খাই, যেমন মাখন লাগান সেঁকা পাঁউরুটি, পপকর্ন ইত্যাদি সবেতেই মাখন থাকে। মাখনে উচ্চ পরিমাণে সংশ্লেষিত দুধ জাতীয় চর্বি এবং কোলেস্টেরল থাকে। তার বদলে, বাদামের মাখন বা এর চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর অন্য যে কোনো বিকল্প খাবার খাওয়া উচিত। যে ধরনের খাবারে দুধ জাতীয় চর্বি 1% এরও বেশি পরিমাণে রয়েছে সেই সব খাবারই এড়ানো উচিত।

পঞ্চম ধাপে, আপনার গরু, শূকর, পাঁঠা বা ভেড়ার মাংস খাওয়াও বন্ধ করা উচিত। গরু, শূকর, পাঁঠা বা ভেড়ার মাংসে অন্য যে কোনো মাংসের তুলনায়, উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল এবং সংশ্লেষিত চর্বি জাতীয় পদার্থ থাকে। কোনো ব্যক্তির দেহে এর মধ্যে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হয়ে থাকলে সেই ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে এবং হৃৎপিণ্ডের রোগে ভুগলে এটি তার পক্ষে আরও মারাত্মক হতে পারে। এর পরিবর্তে, মুরগির মাংস সহ, যা কিছু সিদ্ধ বা রোস্ট করা বিকল্প খাবারগুলি এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত মাছ জাতীয় খাবার বেছে নিন,  যা আপনার পুষ্টিগত চাহিদা পূরণ করে এবং আপনার কোলেস্টেরল-এর মাত্রা সংযত রাখে।

ছয় নম্বরটি হল, প্রয়োজন হলে আপনি নারকেল এবং নারকেল তেল যুক্ত কোনো খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রা থাকলে নারকেল দিয়ে তৈরি করা বা নারকেল তেলে রান্না করা খাবারের উপাদানগুলি এড়ানো উচিত। নারকেল এবং তালের তেল এই দুই প্রকারেই প্রচুর পরিমাণে সংশ্লেষিত চর্বি রয়েছে এবং খাবারের প্রকৃতি স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্পগুলিতে বদলে নিলে তা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে।

অবশেষে বলা যায়, আপনাকে অবশ্যই পরিশোধিত শস্য জাতীয় খাদ্য খাওয়া এড়াতে হবে। পরিশোধিত শস্য বা ময়দা থেকে তৈরি খাবারগুলিতে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা আপনার উপকারী কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রার উপস্থিতিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। সাদা রুটি/পাঁউরুটি বা পাস্তা ধরনের খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। আপনি এর পরিবর্তে বিবিধ-শস্যজাত বা পুরো আটার রুটি উপযুক্ত বিকল্প খাবার হিসাবে আপনার খাবার তালিকায় রাখুন।

উল্লেখ-সূত্র:

  1. https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/21901431
  2. https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/24808490

Loved this article? Don't forget to share it!

Disclaimer: The information provided in this article is for patient awareness only. This has been written by qualified experts and scientifically validated by them. Wellthy or it’s partners/subsidiaries shall not be responsible for the content provided by these experts. This article is not a replacement for a doctor’s advice. Please always check with your doctor before trying anything suggested on this article/website.