শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মানুষকে পরিবেশে উপস্থিত বিভিন্ন সংক্রামক জীবের(ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফানগি, প্যারাসাইট) হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তিভেদে অসংখ্য স্পষ্ট ও উল্লেখযোগ্য আন্তঃবৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়।বংশগতি,বয়স, লিঙ্গ, ধূমপানের অভ্যাস, ব্যায়াম করার অভ্যাস, মদ্যপান করা, উদ্বেগ, সংক্রমণের ইতিহাস ও প্রতিষেধকের ইতিহাস এবং সর্বোপরি জীবনের প্রাথমিক সমস্ত অভিজ্ঞতা সম্ভবত সাধারণভাবে এই পর্যবেক্ষিত বৈচিত্র্যের কারণ। এই সকল বিষয়ের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনশীল বিষয় হল খাদ্যাভ্যাস।
প্রচলিত একটি কথা আছে “আমরা তাই, যা আমরা খাই”- শুধু আমাদের ওজন নয়, রক্তে শর্করার মাত্রা এবং অন্যান্য বিপাকীয় বিষয় আমরা কী খাচ্ছি তার উপর নির্ভর করে। একই ভাবে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও তাই। আমাদের শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দান করে শ্বেত রক্ত কণিকা, এই শ্বেত রক্ত কণিকা মানবদেহের সৈন্যর মতন – তারা সব সময় রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। আর এই সকল সৈন্যরা কি খালি পেটে কাজ করতে পারবে? অতঃপর, সঠিক জাতীয় খাদ্য আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সরবরাহ করা অত্যাবশ্যকীয়।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় উপাদানটি হল প্রোটিন। যদিও বেশ কিছু অ্যামাইনো অ্যাসিড যেমন গ্লুটামিন ও আর্জিনিন অনাক্রম্যতা দানের ক্ষেত্রে অধিক মাত্রায় সমালোচিত, এগুলি আবার প্রায় সমস্ত প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারেই দেখতে পাওয়া যায়। একটু দেখে নিন যে আপনার রোজের খাবারে প্রোটিন আছে তো?
অন্যান্য পুষ্টিপদার্থ যা অনাক্রম্যতা গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য, বিশেষত শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত প্রদাহের ক্ষেত্রে তা হল – ভিটামিন সি। ভিটামিন সি আমলকী, কমলালেবু, মিষ্টি লেবু, পেয়ারা, লেবু, কিউই ইত্যাদি ফলে বর্তমান। অনাক্রম্যতা ব্যবস্থা যথাযথভাবে কাজ করার জন্য যে সমস্ত পুষ্টিপদার্থগুলির প্রয়োজন তা হল – ভিটামিন এ, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি6, ভিটামিন বি12,ভিটামিন ই, জিঙ্ক, কপার, লোহা, সেলেনিয়াম। বস্তুত, এই উপরোক্ত যে কোনো একটি বা একাধিক পুষ্টিপদার্থের অভাব ঘটলে সমস্ত ধরণের অনাক্রম্যতা ভেঙে পড়তে পারে।
সংক্ষিপ্তভাবে, প্রচুর পরিমাণে ডাল, অঙ্কুরিত ছোলা, সব্জি এবং ফলসহ একটা সুষম খাদ্য গ্রহণ আমাদের দেহকে অনাক্রম্যতা প্রদান করে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাওয়া এড়িয়ে চলুন – কারণ এগুলি সাধারণত এতমাত্রায় পরিশোধিত হয় যে তাদের মধ্যে ভিটামিন ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের অভাব লক্ষ্য করা যায়।