নোভেল করোনা ভাইরাস ঘটিত রোগ COVID-19 দ্বারা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমশই উর্ধ্বমুখী এবং এটি কীভাবে ছড়ায় ও এ ব্যাপারে কী করা যেতে পারে তা নিয়ে গুজবের সংখ্যাও বেরে চলেছে। কিন্তু সেগুলো গুজব না সত্য বুঝবেন কীকরে? এখানে কয়েকটি গুজব এবং তার সত্যতার তালিকা নিম্নে দেওয়া হল।(1,2,3)
ক্রান্তীয় অঞ্চলে বাস করি ( ভারতের মত কোনো দেশ)। আমি কি ভাইরাস থেকে নিরাপদ? ভারত উষ্ণ এবং আর্দ্র, চীনের মতো ঠাণ্ডা নয় !
না, আপনি তবু ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু (WHO) প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, আবহাওয়া এই ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য কোনো বাধা নয়। বস্তুত, দেখা গেছে যে এই ভাইরাস যে কোনো এলাকায় সংক্রামিত হতে পারে। এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেমন – নিয়মিত নিজের হাত ধোওয়া এবং স্ব-বিচ্ছিন্নকরণ অথবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।
আমি শুনেছি যে ভাইরাসটি নাকি গরমে মারা যায়? তাহলে গরম জলে স্নান করাই কি হাত ধোওয়ার থেকে ভাল উপায় নয়?
না, উষ্ণ জলে স্নান এই ভাইরাস মারতে পারে না। এ সত্ত্বেও ভাইরাসটি সংক্রামিত হতে পারে। একটা 60% অ্যালকোহল ভিত্তিক স্যানিটাইজার ব্যবহার করা বা সাবান দিয়ে নিজের হাত ধোওয়াই এই সংক্রমণ রোধের সেরা উপায়।
তাহলে, যদি অ্যালকোহল ভিত্তিক স্যানিটাইজার করোনা ভাইরাসকে মারতে পারে তাহলে কি আমি নিজেকে রক্ষা করতে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন বডি স্প্রের মতো ব্যবহার করতে পারি?
না। অ্যালকোহল ভিত্তিক স্যানিটাইজার হচ্ছে সাবান ও জলের একটা বিকল্প মাত্র। ক্লোরিন বা অ্যালকোহল স্প্রে করা আপনার ত্বক ও চোখের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর এবং এটা কোনো সাহায্যও করে না।
যদি আমার ঠাণ্ডা লাগে , তখন স্যালাইন জল দিয়ে নাক ধোওয়া বা গারগেল করলে আমার উপকার হয়। এটা কি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধেও কাজ করবে?
স্যালাইন জল দিয়ে নাক ধুলে বা গার্গেল করলে তা প্রদাহজনিত কিছু লক্ষণ যেমন ব্যথা ও চুলকানি এগুলো কমাতে পারে। কিন্তু COVID-19 নিরাময়ের জন্য এ ব্যপারে কোনো আশাপ্রদ ফল মিলবে না কারণ এটা শ্বাস প্রশ্বাস জনিত সমস্যা।
আমি কি নিজের সুরক্ষার জন্য মাস্ক পরতে পারি?
যদি আপনি অসুস্থ থাকেন এবং খুব কাশী ও হাঁচি হয় বা আপনি যদি কোথাও ভ্রমণ করেন, তবেই একমাত্র মাস্ক পড়ুন।ব্যাপারটা হল, এইভাবে আপনি রোগটা অন্যদের মধ্যে ছড়ানো কিছুটা কম করতে পারবেন। আবার, যদি আপনি মাস্ক পড়েন তবে তা অবশ্যই পড়ার পর সঠিক জায়গায় ফেলে দেবেন না ধুয়ে নেবেন। কিন্তু আপনি যদি সুস্থ থেকেও মাস্ক পড়েন এবং আপনি যদি একজন সেবাকর্মী না হন, তাহলে আপনি হয়ত এই বিশ্বকালীন আকালের সময় একটা মাস্ক অপচয় করছেন! বিবেচনার সঙ্গে ব্যবহার করুন!
হলুদ ও আদা ব্যবহার কী সাহায্য করবে? এটা মনে করা হয় যে এটা অনেক রোগ প্রতিরোধ করে !
যদিও হলুদ ও আদা স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং ঘরোয়া টোটকায় সনাতন ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়, তবে করোন ভাইরাস রোধের ক্ষেত্রে এরকম কোনো বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ নেই যে এগুলি খেলে রোগ প্রতিহত হবে।
আমাদের কি এখনো পর্যন্ত COVID-19 এর কোনো নিরাময় আছে? অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাক্সিন বা ওষুধ কিছুই নেই?
না, এর এখনো কোনো ওষুধ নেই। অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে একটা কথা – এরা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না। বিজ্ঞানীরা আর গবেষকরা সারাক্ষণ একটা নিরাময়ের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর মতো অন্যান্য রোগ মশা ছড়ায়। কিন্তু এই নতুন COVID-19 কিভাবে হয়?
না,মশা নিয়ে চিন্তা করবেন না।করোনা ভাইরাসের কারণে COVID-19 হয় যা শ্বাসযন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং দেখা গেছে যে যদি আপনি কোনো সংক্রামিত ব্যক্তির কাশির সময়ে বেরোনো ক্ষুদ্র জলকণার সংস্পর্শে আসেন, তবে এটি ছড়ায়। তাই, যারা কাশ্ছেন বা হাঁচি দিচ্ছেন তাদের এড়িয়ে চলা অথবা কম শারীরিক যোগাযোগ রাখাই ভাল।
চীন এবং অন্যান্য যে সমস্ত দেশগুলিতে এর প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে সেখানে তৈরী হওয়া কোনো জিনিসের প্যাকেট খোলা কি নিরাপদ?
হ্যাঁ,প্যাকেট খোলা যেতে পারে! যদিও দেখা গেছে যে করোনা ভাইরাস বিভিন্ন রকম পৃষ্ঠের উপর বেঁচে থাকতে পারে, তবে একটি পার্সেল এত জায়গায় ঘুরে আসার পর এর ওপর ভাইরাসের বেঁচে থাকা সাধারণত সম্ভব নয়। কিন্তু যদি আপনার সন্দেহ হয় বা চিন্তা হয়, কোনো জীবাণুনাশক দিয়ে আগে পৃষ্ঠটিকে পরিষ্কার করুন। আর আপনার হাত সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন।
সূত্র:
- Q&A on coronaviruses [Internet]. Who.int. World Health Organization; 2020 [cited 2020 Mar 21]. Available from: https://www.who.int/news-room/q-a-detail/q-a-coronaviruses
- Myth busters [Internet]. who.int. World Health Organization; 2019 [cited 2020 Mar 21]. Available from: https://www.who.int/emergencies/diseases/novel-coronavirus-2019/advice-for-public/myth-busters
- Publishing HH. Coronavirus Resource Center [Internet]. Harvard Health. [cited 2020 Mar 21]. Available from: https://www.health.harvard.edu/diseases-and-conditions/coronavirus-resource-center#COVID