ডায়াবেটিস আমাদের উদ্যম কমিয়ে দিতে পারে যার কারণে অনেক সময় আমাদের অসহায় লাগে। বিশেষ করে ফলাফলটি আপনার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত বলে ডায়াবেটিস সামলানো বেশ কঠিন হতে পারে। আরও জটিল বিষয় হল আপনার রক্তের শর্করার মাত্রার ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে আপনার মেজাজ এবং আচার-আচরণও প্রভাবিত হয়। আপনি হয়ত লক্ষ্য করে থাকবেন যে রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলেই আপনার মেজাজ খুব খারাপ আর অস্থির হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায়, আপনার সমস্যা নিয়ে কোনওরকম ভান করলে তা আপনার মানসিক চাপের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, এবং যদি এটাকে অস্বীকারও করেন তাতেও এটা নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে কোনও লাভ হয় না।
তার বদলে যদি আপনি এই চাপকে ইতিবাচক দিকে ঘুরিয়ে দেন, তবে কেমন হয়? আবেগ-অনুভূতি সামলানোর ক্ষেত্রে অন্যমনস্কতা সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করে। আর যদি আপনি ভালো কাজে ব্যস্ত থাকেন তাহলে নতুন স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরির ক্ষেত্রে উৎসাহিত হবেন কিংবা ডায়াবেটিসকে আরও সহজভাবে নেওয়ার জন্য এই কাজগুলোকে আপনার দৈনন্দিন কাজের তালিকার মধ্যে যোগ করবেন।
খেলার দিন
বহুদিন ধরে দেখা-সাক্ষাৎ নেই এমন বন্ধুকে ডাকলে, আর দুজনে মিলে একটা ‘খেলার দিন’ ঠিক করলে কেমন হয়? একদল বন্ধু নিয়ে বাড়িতেই একটা খেলার আয়োজন করুন আর একসঙ্গে নিজেদের পছন্দের খেলা খেলুন, কিংবা কোনও ক্যাফেতে গিয়ে সবাই মিলে কোনও বোর্ড গেমস খেলুন। যদি সবার সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রে দূরত্ব বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে অনলাইনে সকলে মিলে খেলার মতো প্রচুর মজার মজার খেলা রয়েছে, মনখারাপ লাগলেই বন্ধুদের সঙ্গে সেগুলি খেলতে পারেন।
ধ্যান
একাগ্রমনে ধ্যান করলে তা ডায়াবেটিসের পক্ষে, এবং আরও ভালো করে বললে, জীবনের উৎকর্ষতা বৃদ্ধির পক্ষে সুফলদায়ক হতে পারে। ঘুমের ধরণ, চাপ, উদ্বেগ, চিন্তা ভাবনার উপরে রোজকার ওষুধের একটা ইতিবাচক প্রভাব আছে, যা শারীরিক উপকারের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি করে।
গরমজলে স্নান
একটা মনোরম অনুভূতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটা আপনাকে আরাম দেবে এবং মনমেজাজ পরিবর্তনের হাত থেকে রেহাই দেবে। গরম জল চাপমুক্ত হতে সাহায্য করে আর ঘুমোতে যাওয়ার আগের জন্য এটা একেবারে উপযুক্ত[1] উচ্চ তাপমাত্রা আপনার সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়ায়। সেরোটোনিন হল খুশি থাকার হরমোন, আর এটা মনমেজাজ ঠিক করতে গেলে বা কোনও গুপ্ত আকাঙ্ক্ষা, ক্ষুধা, তৃপ্তির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এইকারণে একটা ক্লান্তিকর দিনের শেষে কেবলমাত্র একবার গরম জলে স্নান করলেই আপনার মেজাজ ও উৎসাহের উন্নতি হতে পারে।
কোনও ভালো বই পড়া
পড়ার সময়ে আপনি নিজের দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে ভাবেন না, অন্য জগতে চলে যান, যা আপনার উদ্বেগ কমায়। আপনার মন শান্ত হয়ে যায়। একইসঙ্গে, আপনি যদি আধ্যাত্মিক বা ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্পর্কিত বই পড়েন, আপনি আপনার অনেক সমস্যা বা প্রশ্নের উত্তর পাবেন, সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি জীবনে প্রয়োগ করার পদ্ধতিগুলিও জানতে পারবেন। বিষয়ের সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পেয়ে সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করার একটি সুষ্ঠু মাধ্যম খুঁজে নিন আর শান্তভাবে সেইমতো চলুন।
পার্কে পায়চারি
আমরা সকলেই মাঝেমাঝে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাই যেখানে আমরা নিজেকে এবং নিজের কাজ ও সম্পর্ক নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে বসি। এটা আরও খারাপ হয়ে ওঠে যখন ডায়াবেটিস সামলানোর মতো গুরু দায়িত্ব আপনার উপর আসে। এইসময়ে ভিটামিন ‘জি’ বা সবুজ গাছপালা আপনাকে বাঁচাতে আসে। বন্ধু অথবা প্রিয়জনের সঙ্গে পার্কে একটু পায়চারি করে এলে শুধু যে আপনার মনমেজাজই ভালো হবে তা নয়, সেইসঙ্গে আপনাকে আপনার কাজের লক্ষ্য অর্জনেও সাহায্য করবে। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও আবেগ-অনুভূতির প্রতি প্রকৃতি এবং সবুজের একটা ইতিবাচক প্রভাব আছে। কানে ইয়ারপ্লাগটা গুঁজে, হালকা গান চালিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে ডুবে যান।
পোষ্যের সঙ্গে খেলুন
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, পোষ্য আপনার জীবনকে নানারকমভাবে পাল্টে দিতে পারে। ওরা শুধু যে আপনাকে কর্মক্ষম রাখে তাই নয়, সেইসঙ্গে চাপ মুক্ত থাকারও সবচেয়ে ভালো উপায়। আশ্চর্যের কিছু নেই, পেট থেরাপি বা পোষ্য চিকিৎসার বাস্তবে অস্তিত্ব আছে। তাই, পরের বার, যখন আপনার মনখারাপ করবে, আপনার পোষ্যের সঙ্গে খেলুন, বা ভালো হয় – ওদের যদি একটু হাঁটাতে নিয়ে যান। ওদের ভাবভঙ্গি দেখে আপনার হাসি পাবে, আর ওদের শর্তহীন ভালোবাসা আপনাকে হাসিখুশি রাখবে।
গোমড়া মেজাজ কিংবা অনর্থক খাবারের লোভ থেকে নিজেকে অন্যমনস্ক রাখার জন্য আপনার পছন্দের উপায় কোনটা? মন্তব্য লেখার জায়গায় আমাদের জানান।
Reference:
- https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/10979246