Reading Time: 4 minutes

আপনি সব ঠিক ঠিক কাজ করতে পারেন; সময়ে ওষুধ খেতে পারেন, ডাক্তার দেখাতে কখনও ভুলে না যেতে পারেন এবং পরিপাটি করে ডায়েরিতে রক্তের শর্করার মাত্রা লিখে রাখতে পারেন। কিন্তু, সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়টি, আর যা কিনা সবচেয়ে বেশি রোগী এড়িয়ে যান, সেটাকেই ডায়াবেটিসের চিকিৎসার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়: জীবনযাত্রা সংশোধন।

জীবনযাত্রা সংশোধন মানে এমন নয় যে আপনার জীবনকে আমূল বদলে ফেলে তাকে একেবারে অচেনা করে ফেলবেন। এর মানে, আপনার রোজকার রুটিনকে একটু অদলবদল করে কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যোগ করা যাতে তা আপনাকে ডায়াবেটিস সামলাতে ভালো করে সাহায্য করে। বলাই বাহুল্য, এটা আপনার সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যেরও উন্নতি করবে।

আমাদের কথায় বিশ্বাস করার দরকার নেই! একটা প্রমাণ দিচ্ছি: 2006 সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, টাইপ 2 ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যে ছয় মাসের জীবনযাত্রার সংশোধনের ফলাফল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে, তাঁদের গ্লাইসেমিকের নিয়ন্ত্রণ ভালো হয়েছে।[1]

খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরচর্চা হল ডায়াবেটিস সামলানোর প্রাথমিক চিকিৎসা।[2] এটা আপনাকে যেসব ওষুধ বা ইনসুলিন দেওয়া হয়েছে, সেগুলোকেও ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।

এখানে ভালোভাবে ডায়াবেটিস সামলানোর জন্য জীবনযাত্রা সংশোধনের একটা সহজবোধ্য নির্দেশিকা দেওয়া হল:

জীবনযাত্রা সংশোধনের মূল ভিত্তি

1. খাদ্যাভ্যাস

একটা সহজ টোটকা হল আপনার খাবারের থালার অর্ধেকটা ফাইবার (শ্বেতসারহীন সব্জি), এক চতুর্থাংশ প্রোটিন এবং এক চতুর্থাংশ কার্বোহাইড্রেট (শ্বেতসারযুক্ত সব্জি) দিয়ে ভরে ফেলা।[3] যেহেতু আপনার রক্তের শর্করায় কার্বোহাইড্রেটই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকে তাই কার্বোহাইড্রেটের ‘হিসেব’ রাখা বেশ ভালো ব্যাপার।[3] একজন নথিভুক্ত পুষ্টিবিদ আপনার কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ এবং খাদ্যতালিকা তৈরির ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন। সবসময় একটি ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম দ্বারা অনুমোদিত পুষ্টিবিদের সাহায্য নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়।

2. শরীরচর্চা

ডায়াবেটিসের রোগীদের প্রতি সপ্তাহে ন্যুনতম 150 মিনিট করে শরীরচর্চা করতে এবং শরীরচর্চার দিনগুলির মধ্যে একদিনের বেশি বিরতি না নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়।[4] প্রতিদিন শরীরচর্চায় শরীরের চর্বি কমে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে, এবং আরও ভালো করে ইনসুলিন শোষণ করতে সাহায্য করে। কিছু প্রতিরোধকারী ব্যায়াম করুন, যেমন ওজন তোলা বা শক্তি বাড়াতে যন্ত্রের মাধ্যমে ব্যায়াম। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রতিরোধকারী ব্যায়ামের মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক টাইপ 2 ডায়াবেটিসের রোগীদের প্রায় 50% পর্যন্ত শক্তি বাড়ানো সম্ভব এবং HbA1C মাত্রা 0.57% পর্যন্ত উন্নত করা সম্ভব।[4]

কার্যত, একটি যুগান্তকারী গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনযাত্রা সংশোধন বেশিবয়স্ক টাইপ 2 ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যেওজন কমানো, কার্ডিও-রেসপিরেটরি সুস্থতা, রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ, রক্তচাপ এবং লিপিডের ক্ষেত্রেও দীর্ঘস্থায়ী উন্নতি ঘটিয়েছে। এটাও দেখা গেছে যে রোগীদের কম ওষুধপত্র লাগছে। এমনকী যেসব মানুষ কোনওরকম জীবনযাত্রার পরিবর্তন ছাড়াই ডায়েবেটিস সংক্রান্ত পরিষেবা নিচ্ছেন তাঁদের তুলনায় এইসব মানুষের স্বাস্থ্যখাতে কম খরচ হচ্ছে।[5]

কীভাবে জীবনযাত্রা সংশোধন করতে শুরু করবেন

জীবনযাত্রা পরিবর্তন করার ব্যাপারে, শ্রেষ্ট উপায় হল ধীরে ধীরে শুরু করা। ধাপে ধাপে ছোট ছোট পরিবর্তন শুরু করুন যাতে বড় পরিবর্তন হতে পারে। আসুন দেখি, আপনার খাদ্যাভ্যাস এবং কার্যকলাপ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আপনি এটি কীভাবে প্রয়োগ করবেন।

খাদ্যতালিকা পরিবর্তন

খাদ্যতালিকা তৈরির ব্যাপারে আপনি নিজেই পড়াশোনা করে ঠিক করতে পারেন বা কোনও অনুমোদিত পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে পারেন। তাঁরা আপনাকে আপনার দৈনন্দিন খাবারের অভ্যাসের আমূল পরিবর্তন না করে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করবেন। আপনি প্রথমে দিনের যেকোনও একবেলার খাবার বদলে শুরু করতে পারেন এবং তারপর অন্যান্য বেলার খাবারেও ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনতে পারেন। ধীরে ধীরে, চিনি ও ক্যাফেনযুক্ত পানীয়ের বদলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত চিনি ছাড়া গ্রিন টি খাওয়া শুরু করতে পারেন। এটা আপনার বিপাকক্রিয়া ভালো রাখতেও সাহায্য করবে।

এতরকম স্বাদের গ্রিন টি পাওয়া যায় যে আপনার লোভ হবে। সেগুলো খেয়ে দেখুন কোনটা আপনার পক্ষে সবচেয়ে ভালো। একমাসের মধ্যেই দেখবেন আপনি একটা সুন্দর স্বাস্থ্যকর অভ্যাসকে আপন করে নিয়েছেন। কবে কী খাচ্ছেন তার হিসেব রাখার জন্য একটা ডায়েরিও রাখতে পারেন। কিছু ডায়াবেটিসের যত্ন সংক্রান্ত অ্যাপ আছে যা আপনাকে এই কাজে সাহায্য করবে এবং আপনার পরবর্তী খাদ্যতালিকা সম্পর্কে মতামত দেবে।

তাহলে বাইরে খেতে যাওয়ার কী হবে?

খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনটা যেন দীর্ঘস্থায়ী হয়। আপনি হয়ত ভাবছেন যে রেস্টুরেন্টে গেলে আপনার পরিকল্পনায় ফাঁকি থেকে যাবে, কিন্তু তারজন্য আপনার সামাজিক জীবনকে বলি দেওয়ার কোনও মানে হয় না। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া মানে নিজেকে বঞ্চিত করা নয়।

কখনও সখনও একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। আপনি বাইরে খেতে গেলে কী কী খেতে পারেন তা বেছে নেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা আপনাকে সাহায্য করতে পারেন। ‘ওয়েলদি’ ডায়াবেটিস অ্যাপের মাধ্যমে আপনার স্বাস্থ্য প্রশিক্ষক আপনার পছন্দের রেস্টুরেন্টে কী কী খাওয়া নিরাপদ বা উপযুক্ত রেস্টুরেন্টের নাম ইত্যাদি জানিয়ে সাহায্য করতে পারেন যা আপনাকে আপনার খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন না করেই একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দিতে পারে। আর যদি সঠিক পরিকল্পনার অভাবে আপনি আপনার সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে না চলেন, তাহলে কীভাবে আবার ঠিক রাস্তায় ফিরে আসবেন সে বিষয়ে আপনার পুষ্টিবিদ অবশ্যই আপনাকে বলবেন।

শরীরচর্চার পরিবর্তন

শরীরচর্চার ক্ষেত্রেও, স্থায়ী ফল পেতে গেলে ধীরে ধীরে শুরু করে একটা দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা করা দরকার। আমরা সবাই নিয়মিত ব্যায়ামের রুটিন মানার ক্ষেত্রে সময় বের করে উঠতে না পারার জন্য কাজ বা সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকার অজুহাত দিই। যদিও রুটিন একটা গভীর শব্দ। প্রথমে কেবলমাত্র দৈনিক 10 মিনিট করে ব্যায়াম শুরু করুন। দুপুরে খাওয়ার পরে একটু হাঁটুন, গাড়ি ছেড়ে হেঁটে হেঁটে মুদির দোকানে যান, টিভি দেখার সময়ে হাত পা একটু নাড়াচাড়া করুন বা সকালে চা ঠান্ডা হতে হতে একটু সূর্য-নমস্কার করুন। মাত্র 10 মিনিট সময় বের করুন। এটা কিন্তু সহজেই সম্ভব।

যখনই আপনি এই 10 মিনিটের অভ্যাসে পোঁছে যাবেন, চেষ্টা করুন এর সঙ্গে প্রতি এক বা দুই সপ্তাহ অন্তর 5 মিনিট করে যোগ করতে। একমাসের মধ্যেই আপনি দৈনিক 30 মিনিট করে ব্যায়াম করবেন। যদিও এটা আপনার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম, তবুও কোনওরকম ব্যায়াম না করার চাইতে অনেক ভালো। কিন্তু আপনাকে ক্রমাগত নিজেকে উৎসাহিত করে যেতে হবে। কতটা ক্যালোরি ঝরালেন বা কত ধাপ এগোলেন তা জানার জন্য আপনার ফোনে শরীরচর্চার হিসেব রাখুন। ওয়েলদি ডায়াবেটিস অ্যাপের মতো কিছু অ্যাপে আপনি আপনার ব্যায়ামের ধরণধারণ সম্পর্কেও দেখতে পাবেন, যেমন, কোনদিন সবচেয়ে বেশি আর কোনদিন সবচেয়ে কম ব্যায়াম করেছেন ইত্যাদি।  

দেরি না করে আজই শুরু করুন

ডায়াবেটিস নামক ধাঁধাটি সমাধান করার জন্য যে বিষয় দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তারাই কিন্তু সম্পূর্ণভাবে আপনার উপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে। ওদের থেকে বেরিয়ে এসে ওগুলোকে ব্যবহার করে ধাঁধা সমাধান করতে দেরি করবেন না। যত তাড়াতাড়ি পারেন শুরু করুন। পরিকল্পনা করে চললে আপনারই লাভ হবে। একটু খোঁজখবর করে আপনাকে জীবনযাত্রা সংশোধনের ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবেন এরকম অনুমোদিত বিশেষজ্ঞের কাছে যান।

সূত্র:

  1. Kim, S. H., Lee, S. J., Kang, E. S., Kang, S., Hur, K. Y., Lee, H. J., … & Lee, H. C. (2006). Effects of lifestyle modification on metabolic parameters and carotid intima-media thickness in patients with type 2 diabetes mellitus. Metabolism, 55(8), 1053-1059.
  2. Sahay, B. K., & Sahay, R. K. (2002). Lifestyle modification in management of diabetes mellitus. Journal of the Indian Medical Association, 100(3), 178-180.
  3. Mayo Clinic. Diabetes diet: Create your healthy-eating plan. Available at https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/diabetes/in-depth/diabetes-diet/art-20044295  [Accessed June 2018]
  4. Colberg, S. R., Sigal, R. J., Yardley, J. E., Riddell, M. C., Dunstan, D. W., Dempsey, P. C., … & Tate, D. F. (2016). Physical activity/exercise and diabetes: a position statement of the American Diabetes Association. Diabetes Care, 39(11), 2065-2079.
  5. Pi-Sunyer, X. (2014). The Look AHEAD trial: a review and discussion of its outcomes. Current nutrition reports, 3(4), 387-391.

Loved this article? Don't forget to share it!

Disclaimer: The information provided in this article is for patient awareness only. This has been written by qualified experts and scientifically validated by them. Wellthy or it’s partners/subsidiaries shall not be responsible for the content provided by these experts. This article is not a replacement for a doctor’s advice. Please always check with your doctor before trying anything suggested on this article/website.