ডায়েটরি অভ্যাস পরিবর্তন করা আপনার জীবনযাত্রার অন্যতম প্রধান পরিবর্তন যা আপনি সম্প্রতি হৃদরোগের শিকার হয়ে থাকলে তা অবশ্যই করা দরকার। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াি যে কেবল আপনার পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করবে তা না তবে হৃদপিণ্ডের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য জটিলতাগুলি রোধ করতে অনেক রকমভাবে সহায়তা করবে। AIIMS-এর কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ সন্দীপ মিশ্র হৃদরোগের রোগীদের ডায়েটরি পরিবর্তন সম্পর্কে এক বিস্তারিত অন্তর্দৃষ্টি এখানে দিয়েছেন।
1. বেশিক্ষণ ধরে রান্না করা খাবার এড়িয়ে চলুন:
যদিও ভারতীয় জনগোষ্ঠী মূলতঃ নিরামিষভোজী তবে ভারতীয়দের মধ্যে শাকসবজি এবং ফলমূল সম্পর্কে সচেতনতার ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। লোকে রান্নার সময়ে রসা বা বেশি ক্কাথ যুক্ত খাবার পরিমাণ বেশি খায়, যা কাঁচা শাকসবজির মতো পুষ্টিকর মান দেয় না। এছাড়াও, তেল এবং ঘি ব্যবহার খাবারকে চর্বি এবং কোলেস্টেরলের সমৃদ্ধ উৎসে পরিণত করে, যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এমনকী ঘরে রান্না করা খাবারও কম পুষ্টিকর কারণ আমরা সমস্ত কিছুকেই বেশি পরিমাণে রান্না করে থাকি যার ফলে পুষ্টির ক্ষতি হয়। হৃদরোগের রোগী হিসাবে এটি একটি বড় উদ্বেগজনক বিষয় হতে পারে। হৃদরোগ থেকে সেরে করার সময়, আপনি শাকসবজির পুষ্টিগুণ অক্ষত রেখে সেবন বাড়িয়ে দিতে পারেন। অতএব, সহজ প্রস্তুতি সহ নূন্যতম রান্না করা শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শই দেওয়া হয়।
2. সবুজ শাক-সবজি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ ফল আরও বেশি করে খান:
আপনি স্যালাড, সবুজ শাকসবজি, শাকের মতো, এবং কমলার মতো ফাইবার সমৃদ্ধ ফলের সাথে বেশিক্ষণ ধরে রান্না করা খাবার বদল করতে পারেন। এগুলি ভিটামিন K এর একটি ভাল উৎস, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ধমনীগুলির কার্যকারিতা উন্নত করে, যার ফলে হৃদপিণ্ড সুস্থ ও সবল হয়। এছাড়াও এগুলিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার রয়েছে যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
3. লবণের পরিমাণ কমিয়ে নিন:
লবণের সোডিয়াম সরাসরি রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে যা হৃদরোগীদের পক্ষে ভাল নয়। এটি আপনার অন্য আরেকটি হৃদরোগজনিত ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। এমনকী বাইরে কোথাও খেতে গিয়ে স্বল্প-সোডিয়াম বা লবণ কমে যাওয়া রান্নার প্রস্তুতির অনুরোধ সহ স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলি বেছে নিন। চিপস, বার্গার এবং ফ্রাই জাতীয় জাঙ্ক খাবার গ্রহণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা উচিত, কারণ এগুলি সমস্ত বেশি লবণযুক্ত খাবার।
4. রেড মিট খাওয়া থেকে বিরত থাকুন:
আপনি যদি মাংস খানও তবে রেড মিট মোটেও খাবেন না। এটি আপনার হৃদপিণ্ডর পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এতে সম্পৃক্ত ফ্যাট থাকে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং আপনার হৃদপিণ্ডর অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে। মাংসের ক্ষেত্রে চর্বিহীন মুরগি আরও ভাল বিকল্প।
5. আপনার ডায়েটে ডিম যোগ করুন:
হৃদপিণ্ডর জন্য স্বাস্থ্যকর ডায়েট দেখার সময় দিনে একটি ডিমই খাওয়া ভাল। এটি ডিমের কুসুমের কোলেস্টেরল নয় যা সমস্যার কারণ হতে পারে, তবে ডিমগুলি কীভাবে প্রস্তুত হয় এবং কীভাবে এগুলি অন্যান্য খাবারের সাথে খাওয়া হয়, সেটা বুঝেই খেতে হবে। মাখন, তেল এবং মাংসের অন্যান্য রূপগুলির মতো সম্পৃক্ত ফ্যাটগুলির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ, যা ডায়েটের অস্বাস্থ্যকর অবস্থাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। ডিম মধ্যে অনেকগুলি ভাল পুষ্টিগুণ থাকে যা একটি পুষ্টিকর খাদ্য তৈরিতে সহায়তা করে।
6. মাছ খাওয়ার পরিমাণ বাড়ান:
স্যামন এবং ম্যাকেরেল জাতীয় কিছু মাছ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডে প্রচুর পরিমাণে সমৃদ্ধ, যা হৃদযন্ত্রের পক্ষে ভাল। হৃদরোগ থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য সপ্তাহে দুইবার মাছ খাওয়া যেতে পারে। আবার তৈলাক্ত রসা বা ক্কাথ যুক্ত ঝোল রান্না করা মাছ এড়িয়ে চলুন।
7. স্বাস্থ্যকর তেলে রান্না করা বিকল্প খাবারগুলিতে বদল করুন:
যথেষ্ট পরিমাণে তেল দিয়ে রান্না না করলে ভারতীয় খাবারগুলি যেন অসম্পূর্ণ থাকে। এটি এমন কিছু যা যেইভাবেই হোক আমাদের এড়াবার চেষ্টা করা উচিত। তবে, ইতিমধ্যে, একটি স্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্যকর তেলে রান্না করা খাবার খেলে তা অবশ্যই একটি পার্থক্য আনবে। সরিষার তেল এবং ধানের তুষের তেল যেমন তেল ব্যবহার করা পুষ্টিকর। তাদের মধ্যে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডগুলির ভারসাম্য রয়েছে, যা আপনার হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। এছাড়াও, এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও, একই রান্নার তেলকে একাধিকবার অন্য কোনো রান্নায় পুনরায় ব্যবহার করা কঠোরভাবে এড়ানো উচিত। এটি ফ্রি র্যাডিক্যালগুলির পরিমাণ বাড়ায় যা রক্তনালী এবং হৃৎপিণ্ডের টিস্যুগুলির ক্ষতি করতে পারে।
8. আপনার ডায়েট থেকে ঘি বাদ দিন:
রোজকার রান্নায় ভারতে বনস্পতি ঘি এবং দেশি ঘি ব্যবহার খুব সাধারণ। তবে এগুলি উভয়ই হৃদরোগের জন্য ক্ষতিকারক। বনস্পতি ঘিতে ট্রান্স ফ্যাট থাকে যা দেহে অপকারী কোলেস্টেরল (LDL) এর মাত্রা বাড়ায়, যার ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও এটি শরীরে উপকারী কোলেস্টেরল (HDL) এর মাত্রাও কমিয়ে দেয়। দেশি ঘিতে সম্পৃক্ত ফ্যাট থাকে যা আবার অপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।
9. পরিশোধিত শস্যের পরিবর্তে গোটা দানা যুক্ত শদ্য খাওয়া:
গোটা গম, ওটমিল এবং বাদামি চালের মতো গোটা দানা যুক্ত শস্যগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার থাকে, যা দেহে কোলেস্টেরলের উপকারী মাত্রা উন্নতি করতে সহায়তা করে, যার ফলে হৃদযন্ত্রের সমস্যার ঝুঁকি হ্রাস পায়। এগুলি প্রয়োজনীয় ভিটামিনগুলির একটি ভাল উৎস যা আপনার সেরে ওঠার গতি বাড়ায় এবং আপনার হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা উন্নত করতেও সহায়তা করতে পারে।