যে কোনো জীবিত কোষের ক্ষেত্রে লিপিড এবং কোলেস্টরেল খুবই দরকারি বিষয়। তাই লিপিড অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গেলে তা ডিসলিপিডমিয়া এর সূত্রপাত করে। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ওবং লিপিড এরপর আবার হৃদরোগেরও কারণ হতে পারে।(1)
রক্তে কলেস্টররোল বেশি হবার অনেক কারণ লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন তথ্য নিয়ে দেখা গেছে যে অস্বাস্থ্যকর বা নেগেটিভ জীবন ধারা এর মধ্যে অন্যতম।(2) এটি বিশেষ ভাবে লক্ষণীয় যে নেগেটিভ জীবনধারা কিন্তু একটি মানুষকে ডিসলিপিডমিয়ার দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই নতুন বছরে নেগেটিভ স্বভাব ছেড়ে কিছু পজিটিভ ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণ করা উচিত।
এই রোগের ফলে কি কি হতে পারে?
– উচ্চ লেভেলের বাজে কোলেস্টরেল বা LDL
– নিম্ন লেভেলের এর ভালো বা HDL কোলেস্টেরল
– উচ্চ লেভেলের ট্রাইগ্লিসারাইড
এই অস্বাভাবিক লিপিড লেভেল এর ফলে হৃদযন্ত্রের শিরা ও ধমনিতে ফ্যাট জমা হতে পারে। তার ফলে শিরা ও ধমনীর ভিতরকার রক্ত চলাচলের পথ সরু হয়ে যাবে ও রক্ত চলাচল ধীরে হবে। এই কারণে রক্তের যোগান হৃদযন্ত্রে যথেষ্ট পরিমাণ হবে না। এই কারণে রোগীর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পরিস্থিতিকে অবশ্যম্ভাবী হতে পারে। তাই ভালো কোলেস্টরেল রক্তে সঠিক পরিমানে থাকা দরকার যাতে এই ফ্যাট শিরার ভিতর জমা না হয়।(1) যেহেতু শরীর নিজেই খারাপ ধরণের কোলেস্টরেল শরীরের ভিতরে তৈরি করে। তাই সেই ব্যাপারে রোগীকে সচেতন থাকতে হবে, কারণ খারাপ কোলেস্টরেল রক্তে বেশি থাকলে তা শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।(2)
কিভাবে নেগেটিভ জীবনযাত্রা আমাদের রক্তে কোলেস্টরেল এর মাত্রা বৃদ্ধি করে?
এর তালিকা নীচে দেওয়া হলো(2,3,4)
– অস্বাস্থ্যকর খাবার: খাদ্যতালিকায় এমন খাবার থাকা উচিত নয় যা কিনা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়
– শারীরিক অনুশীলনের অভাব: ব্যক্তির কর্মহীনতা যা শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে ও যার কারণে রক্তে বাজে কোলেস্টরেল এর মাত্রা বেড়ে যায়
– ধূমপান: ধূমপান ব্যক্তির শরীরের রক্তের কোষ কে নষ্ট করে দেয় ও তার ফলে রক্তে ভালো কোলেস্টরেল এর পরিমাণ কমিয়ে দেয়
– অতিরিক্ত ওজন: শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদ ও তার কারণে বেশি ওজন রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় ও খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়
নেগেটিভ জীবনযাত্রার মানুষরা কি করে এই রোগ কে নিয়ন্ত্রণ করে?
নেগেটিভ জীবনযাত্রা থেকে মুক্তি পেতে জীবনযাত্রায় সামান্য পরিবর্তন আনলে এই রোগ ও শরীরের অন্য জটিলতা কে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।(2) এরপর জীবন যাত্রার পরিবর্তনেও যদি এই ডিসলিপিডমিয়া না নিয়ন্ত্রিত হয় তবে ওষুধ খেতে হবে। এই বছর এই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত যে রোগী একটি পজিটিভ জীবনযাত্রার মধ্যে চলবেন ও সুস্থ থাকবেন।(4)
– খাদ্য পরিবর্তন করুন: আপনার খাদ্যতালিকা থেকে রেডমিট, হাইফ্যাট খাবার, ভাজা খাবার এসব কমিয়ে দিন । হৃদযন্ত্র উপযুক্ত খাবার খান, যেমন ফল, সবজি, হোল গ্রেইন, পোল্ট্রি ও মাছ। অতিরিক্ত ফাইবার যুক্ত খাবার আপনার কলেস্টোরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করবে।(4)
– শারীরিক ভাবে এক্টিভ থাকুন: গবেষণায় জানা যায় যে শারীরিক ব্যস্ততা ও নানা ধরণের শারীরিক কার্যকলাপ যেমন হালকা হাঁটা, সাইকেল চালানো অন্তত প্রতিদিন 30-45 মিনিট , আপনার কোলেস্টরেল লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করবে।(5) এরবিক, সপ্তাহে 100-120 মিনিট অনুশীলনও রোগীর রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে পারে ও ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করতে পারে । লক্ষ করা গেছে যে, খাবারে সামান্য রদবদল ও কিছু হালকা অনুশীলন রক্তে লিপিড প্রোফাইলের উন্নতি সাধন করবে।(7) হালকা হাঁটা, সাঁতার, সাইক্লিং বা নাচের অনুশীলন ও সাহায্য করতে পারে(4)
ধূমপান বর্জন: ধূমপান রক্তে মোট কোলেস্টরেল এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। খারপটা বাড়িয়ে দেয়, ভালো কোলেস্টরেলের পরিমান কমিয়ে দেয়।(7)
– সুস্থ ওজন বজায় রাখুন: ওজন কমাতে রোজ অনুশীলন করা জরুরি। প্ৰমান পাওয়া গেছে যে 10% ওজন বর্জন শারীরিক উন্নতি সাধন করে।(4)
– মদ্যপান: মদ্যপান শরীরে ভালো কোলেস্টরেল এর মাত্রা বাড়ায়।(7)
এই জীবন যাত্রার পরিমার্জনের ক্ষেত্রে রোগীর স্বভাবের কোন কোন আচারব্যবহার তাকে সঠিক ভাবে রূপদানে অক্ষম হয়?
যেমন ধরুন:(7)
-দুর্বল ইচ্ছাশক্তি
– জীবন যাত্রার পরিবর্তনের উপকারিতার ব্যাপারে রোগীর যথেষ্ট সচেতন না থাকা
– সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় কার্যকলাপ অনুসরণের ইচ্ছের অভাব
– পরিবর্তিত জীবনযাত্রার মধ্যেও কিছু কিছু জটিলতা
– চেতনার বাধা যা দেখা যায় যেমন ডিমেনশিয়া বা ব্রেন এ আঘাতের ক্ষেত্রে
একটি নেগেটিভ জীবনযাত্রার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এমন মানুষের কোনো এই বিষয়ে যোগ্য ও পেশাদার লোকের সাথে আলোচনা, তাকে পজিটিভ জীবন যাত্রার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। খাদ্যবিশারদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রোগীকে তার সঠিক খাদ্য নির্বাচন এবং পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারে।(7) শারীরিক ভাবে সচল থাকা দরকার ও শরীরের ওজন কমানো উচিত যাতে আপনি ডিসলিপিডমিয়া কে রোধ করতে পারেন।(4) আশা করবো এই পরিচ্ছেদ আপনাকে নেগেটিভ জীবনযাত্রার কুফল বুঝতে সাহায্য করবে এবং একটি সুস্থ উপায় জানাবে যা আপনাকে ডিসলিপিডমিয়া কে জয় করতে সহায়তা করবে।
নতুন বছরের একটা প্রতিজ্ঞা নিন যাতে আপনি নেগেটিভ জীবনযাত্রা পরিত্যাগ করতে পারেন ও একটি সুন্দর জীবনযাত্রা কে গ্রহণ করতে পারেন। আপনি যদি আপনার লিপিড লেভেল কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তবে তা আপনার এই ডিসলিপিডমিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
সূত্র:
- Hormone Health Network. Dyslipidemia [Internet]. [updated 2018 May; cited 2019 Dec 18]. Available from: https://www.hormone.org/diseases-and-conditions/dyslipidemia.
- American Heart Association. Causes of high cholesterol [Internet]. [updated 2017 Apr 30; cited 2019 Dec 18]. Available from: https://www.heart.org/en/health-topics/cholesterol/causes-of-high-cholesterol.
- Centers for Disease Prevention and Control. Knowing your risk – high cholesterol [Internet]. [updated 2019 Feb 6; cited 2019 Dec 18]. Available from: https://www.cdc.gov/cholesterol/risk_factors.htm.
- American Heart Association. Prevention and treatment of high cholesterol (hyperlipidemia) [Internet]. [updated 2017 Apr 30; cited 2019 Dec 18]. Available from: https://www.heart.org/en/health-Ref 4 topics/cholesterol/prevention-and-treatment-of-high-cholesterol-hyperlipidemia.
- Puddu PE, Menotti A. The impact of basic lifestyle behaviour on health: how to lower the risk of coronary heart disease, other cardiovascular diseases, cancer and all-cause mortality. Lifestyle adaptation: a global approach. E journal of cardiology practice. 2015;13:32.
- Kelly RB. Diet and exercise in the management of hyperlipidemia. Am Fam Physician. 2010 May 1;81(9):1097-1102.
- Mannu GS, Zaman MJS, Gupta A, Rehman HU and Myint PK. Evidence of lifestyle modification in the management of hypercholesterolemia. Current Cardiol Rev. 2013 Feb 1;9(1):2-14.