উচ্চ-মাত্রার রক্তচাপ অনেক ধরনের অসুস্থতার কারণ হতে পারে এবং আপনার স্বাস্থ্য-অবস্থাকে বিরাট ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। হৃদযন্ত্রের সমস্যা, কিডনির কাজে বিফল হওয়া এবং পক্ষাঘাত এর মধ্যে কয়েকটি মাত্র। উদাহরণস্বরূপ, আপনি কি জানতেন যে উচ্চ-মাত্রার রক্তচাপের ফলেও ইরেক্টাইল ডিসফাংশন হতে পারে?
আপনার ওষুধ সেবন করার পাশাপাশি, আপনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে প্রাকৃতিক পদ্ধতিও ব্যবহার করতে পারেন। ধূমপান ত্যাগ এবং আপনার খাদ্য-লবণের পরিমাণ হ্রাস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও প্রধান ভূমিকা নিতে পারে।
উচ্চ-মাত্রার রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন উপশম করতে আপনার ডায়েটে যোগ করতে পারেন এমন কয়েকটি ভেষজ-গুল্ম এবং মশলাগুলি এখানে দেওয়া হল:
1. এলাচ
একটি গবেষণা সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এলাচের মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্য[1] রয়েছে এবং এতে উপস্থিত ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট-গুলি রক্ত সঞ্চালনকে উৎসাহিত করতে এবং এইভাবে রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করতে পারে। আপনি আপনার চা এবং খাবারের প্রস্তুতির জন্য মশলা হিসাবে এলাচ যোগ করতে পারেন বা প্রতিদিন বীজ সহ কয়েকটি এলাচ শুকনো চিবিয়েও খেতে পারেন।
2. ফ্ল্যাকসিড বা তূষের বীজ
এগুলিতে উপস্থিত ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড যা হৃদযন্ত্রের নানা রোগ এবং বিপাকীয় নানা নেতিবাচক লক্ষণের উদ্ভব থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে, এছাড়াও ফ্ল্যাকসিড বা তূষের বীজে উপস্থিত লিগনানগুলি রক্তে শর্করার উপস্থিতি ও রক্তচাপকে কমিয়ে দেয় এবং প্রদাহ হ্রাস করে।[2] পরটা বা রুটি তৈরির সময় আপনার গমের আটাতে গুঁড়ো ফ্ল্যাকসিড বা তূষের বীজ যোগ করুন। আপনি এটিকে সালাদ এবং স্মুদিতেও যোগ করতে পারেন বা এগুলি দিয়েই স্ন্যাক তৈরি করতে পারেন।
3. ক্যারাম বীজ (জোয়ান বীজ)
আপনার ডায়েটে গোটা ক্যারাম বা জোয়ান বীজ যুক্ত করা বা জোয়ান মেশান জল পান করলে তা রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে।[3] ক্যারাম বা জোয়ান বীজগুলিতে থাইমল রয়েছে, ফলে এতে ক্যালসিয়াম-এর চ্যানেল অবরুদ্ধ করার মতো প্রভাব থাকতে পারে।[4] যা রক্তনালীগুলি শিথিল করে পরিসর বাড়াতে সহায়তা করে এবং এইভাবে রক্তচাপকে হ্রাস করতে সহায়তা করে।
4. ল্যাভেন্ডার
ল্যাভেন্ডারের বৈশিষ্ট্যগুলি মন শান্ত করে রক্তচাপ হ্রাস করার জন্য এটি একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার তৈরি করতে পারে।[5] এটি উদ্বেগ হ্রাস করতে সাহায্য করে এবং ধমনীগুলির ভিতরের পরিসর বাড়ায়, ফলে উচ্চ রক্তচাপের লোকের উপর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর উপকারিতা পেতে দিনের শেষে কিছু ল্যাভেন্ডার মেশান চায়ে চুমুক দিন। মালিশের জন্য ল্যাভেন্ডার তেল ব্যবহার করা মানসিক পীড়ন কমাতেও সহায়তা করতে পারে।
5. সেলারি পাতা
পটাসিয়াম সমৃদ্ধ, সেলারি হাইপারটেনশন[5] পরিচালনার জন্য কার্যকর ওষধি হতে পারে। গবেষণা থেকে জানা যায় যে এর মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্যগুলি কেবল রক্তচাপকে হ্রাস করতে পারে তাই নয়, তবে খারাপ LDL কোলেস্টেরলও কমিয়ে দিতে পারে। আপনার স্মুদি-তে সেলারিপাতা যুক্ত করুন বা তাদের খাবারের উপরে সাজানর জন্য রাখুন।
6. গ্রিন টি বা সবুজ বা ওলোং চা
উচ্চ-মাত্রার রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে সহায়তার জন্য প্রতিদিন ওলোং চা[6] পান করলে উপকার পাওয়া যায় দেখা গিয়েছে। গ্রিন টি বা ওলোং চা স্নায়ু-শিথিল করে বিশ্রামের প্রভাব দেয়, এবং এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি আরও অনেক দীর্ঘস্থায়ী রোগকে উপশম করতে পারে।
তথ্যসূত্র:
- Verma SK, Jain V, Katewa SS. Indian Journal of Biochemistry and Biophysics. 2009 Dec;46(6):503-6
- Adolphe JL, Whiting SJ, Juurlink BH, Thorpe LU, Alcorn J. The British Journal of Nutrition. 2010 Apr;103(7):929-38. doi: 10.1017/S0007114509992753. Epub 2009 Dec 15.
- Aftab K, Atta-Ur-Rahman, Usmanghani K. International Journal of Phytotherapy and phytopharmacology. 1995 Jul;2(1):35-40. doi: 10.1016/S0944-7113(11)80046-2.
- Gilani AH, Jabeen Q, Ghayur MN, Janbaz KH, Akhtar MS. Journal of Ethnopharmacology. 2005 Apr 8;98(1-2):127-35.
- Nahida Tabassum and Feroz Ahmad. Pharmacognosy Review. 2011 Jan-Jun; 5(9): 30–40. doi: 10.4103/0973-7847.79097
- Yang YC, Lu FH, Wu JS, Wu CH, Chang CJ. Archives of Internal Medicine. 2004 Jul 26;164(14):1534-40.