আমরা বর্তমানে প্রত্যেকে দেশের ভিতর সম্পূর্ণভাবে গৃহবন্দী হয়ে আছি।এটা নিঃসন্দেহে ভীষণ উদ্বেগের সময়। তবে এই চিন্তা এবং উদ্বেগ কেবল বাইরের পরিবেশ এবং ভাইরাসের ভয়ের কারণেই হচ্ছে না, বরং আমরা যে সারাক্ষণ ঘরে বসে আছি সেই কারণেও ঘটছে। যেহেতু আমরা বাড়িতে আছি এবং একঘেয়ে লাগছে, তাই আমরা সাধারণত বেশী মাত্রায় টুকটাক খাবার খেয়ে ফেলছি। বেশিরভাগ সময়ই হয়তো আমরা সদ্যই খাবার খেলাম বা আমাদের হয়তো খিদে পায়নি, তাও আমরা অল্প টুকটাক খেয়ে ফেলছি এই ভেবে যে একটা ছোট্ট বাটি বা কয়েক চামচ কিছু খেলে এমন কী আর ক্ষতি হবে!
শুধু ভাবুন যে টুকটাক খাবার হিসেবে যদি আপনি একটা ফল খান, তবে তা 50 থেকে 75কিলো ক্যালোরির মধ্যে থাকে (আপনি কোন ফল নির্বাচন করছেন তার উপর নির্ভর করছে)। এরকম তিনটে ফল-নির্ভর জলখাবার প্রায় 150-200 কিলো ক্যালোরির সমান হয় এবং তাতে প্রায় 30গ্রাম কার্বহাইড্রেট থাকে। একটা রুটি বা এক বাটি ভাত আপনাকে যতটুকু ক্যালোরি দিতে পারে, এর মধ্যে তার থেকে বেশি পরিমাণ ক্যালোরি রয়েছে।
কিছু না ভেবে বুদ্ধিবৃত্তিহীনভাবে জলখাবার খেলে তা রক্তের শর্করার মাত্রাকে নষ্ট করে দেয়। আর আমরা জানি যে, আমাদের অনাক্রম্যতা ব্যবস্থা মজবুত রাখার জন্য আমাদের ডায়াবেটিস কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণাধীন রাখা একান্ত কাম্য। আবার, কোনো একজন ব্যক্তি যদি খাওয়ার আগে ও পরে সবসময় টুকটাক খাবার খেতে থাকে, তবে তার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায় কারণ, আপনি জানবেন না যে কখন আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। বাইরের বা প্যাকিং করা যে সমস্ত জলখাবার সহজে পাওয়া যায়, তার অধিকাংশই উচ্চ পরিমাণে চর্বি, লবণ ও চিনি দিয়ে প্রস্তুত করা থাকে।
তাহলে আমরা কি একেবারেই জলখাবার খাব না? না, তা একদমই নয়, জলখাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তবে আপনাকে সর্বোপরি যেটা দেখতে হবে তা হল, আপনাকে যে খাদ্যাভ্যাসের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, উক্ত জলখাবার আদৌ তার অন্তর্ভুক্ত কিনা। যদি তা হয়, তবে পরামর্শ অনুযায়ী জলখাবার খান। কিছু ভাল জলখাবার যা আপনি নির্বাচন করতে পারেন তা হল – লবণবিহীন বাদাম, লেবুজাতীয় ফল, সব্জি যেমন- শশা,শাক, লঙ্কা, গাজর প্রভৃতি এবং সঙ্গে কিছু স্বাস্থ্যকর ডিপস যেমন – টক দই বা হাম্মাস। এছাড়া অবশ্যই মনে রাখবেন, যে কোনো জলখাবার খাওয়ার আগে নিজেকে লক্ষাধিক টাকার সেই প্রশ্নটা কখনই জিজ্ঞাসা করতে ভুলবেন না –” আমার কি সত্যিই খিদে পেয়েছে?”
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং চটজলদি তৈরী হবে এমন একটি জলখাবারের রেসিপি এখানে দেওয়া হল:
উপাদান:
চিড়ে (পাতলা চিড়ে): 500 গ্রাম
চিনাবাদাম: 2 মুঠো ( প্রায় 200 গ্রাম)
ছোলা : 2 মুঠো ( প্রায় 200 গ্রাম)
সবুজ লঙ্কা : 4-5 টি (কুচি কুচি করে কাটা)
কারী পাতা : 10 -15 টি
সাদা তেল: 5 টেবিল চামচ
হিং : ½ চা চামচ
হলুদ : 1 চা চামচ
নুন : স্বাদ অনুযায়ী
প্রণালী:
- চিড়ে টিকে কড়াইতে দিয়ে হালকা আঁচে শুকনো ( কোনো তেল ছাড়া) মুচমুচে করে ভাজুন
- কড়াই থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করুন
- অন্য একটি বড়ো কড়াইতে 5 টেবিল চামচ তেল গরম করুন
- তেল গরম হলে তাতে 2 চা চামচ সর্ষেদানা দিন এবং তা গরম হলে তাতে ½ চা চামচ হিং দিন। এরপর একে একে তাতে লঙ্কা কুচি, বাদাম এবং কারীপাতা দিন।
- বাদামটা ভাজা ভাজা হয়ে গেলে তাতে আগে থেকে ভেজে রাখা ছোলা এবং হলুদ মিশিয়ে সেটিকে নাড়াচাড়া করে ভাজতে থাকুন।
- প্রায় 5 মিনিট ভাজার পর তাতে আগে থেকে শুকনো ভেজে রাখা চিড়ে দিয়ে দিন এবং ভালো করে মিশিয়ে নিন। এতে স্বাদ অনুযায়ী লবণ মেশান এবং কড়া দিয়ে নামিয়ে ফেলুন – আপনার স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু চিরেভাজা তৈরি। এটি ঠান্ডা হওয়ার পর উপভোগ করুন বা একটি এয়ার টাইট বাটিতে স্টোর করে রাখুন।
টিপস্: চিনাবাদাম ছাড়াও এতে আলমন্ড, কাজু বাদাম দেওয়া যেতে পারে। তিল, তিশি জাতীয় পুষ্টিকর দানাও এতে যোগ করা যেতে পারে।
এর ওপরে টমেটো এবং পেয়াজ কুচি দিয়ে এটিকে চাট বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে।