যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে ‘আমি কি ব্যায়াম করবো কিনা’ প্রশ্নটি আপনার মনে নিরন্তর ঘুরতেই থাকে, আর কোন ব্যায়ামটি আপনার পক্ষে উপযুক্ত হবে সেটি নিয়ে ভাবার যথেষ্ট কারণও আছে।
ডায়াবেটিকদের পক্ষে শরীরচর্চা করা কেন ভালো
নিয়মিত শরীরচর্চা আপনার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে যথেষ্ট উপকারী হতে পারে, এবং এটি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখারও দারুণ উপায়। এছাড়াও, শরীরচর্চা করা আপনার শরীরকে শরীরে উৎপন্ন হওয়া বা শরীরে ইঞ্জেক্ট করা ইনসুলিনের প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তুলবে। যখন আপনি ব্যায়াম করেন তখন শরীরের মেদ ঝরতে থাকে, এবং এটি আপনার ইনসুলিন প্রতিরোধশক্তি কমিয়ে দেয়।(1) এটি হওয়া ভালো, কারণ এটি বাড়তি কোনো ওষুধের প্রয়োজন হওয়া ছাড়াই আপনার রক্ত শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রাকৃতিক উপায়।(2)
কিন্তু আপনার ডায়াবেটিস যদি আপনাকে অত্যধিক ক্লান্ত করে তোলে এবং আপনাকে ব্যায়াম করা থেকে দূরে রাখে, তাহলে সেটির সাথে লড়ার জন্য আমাদের বিশেষজ্ঞরা কী কী পরামর্শ দিয়েছেন তা পড়ে নিন।
শরীরচর্চার আগে
1. আপনার আইডি সাথে রাখুন: আপনি জিমেই যান, জগিং করতেই যান বা হালকা ব্যায়ামের জন্য বাইরেই বেরোন, সর্বদাই ঘরে বা কাজের জায়গায় কাউকে জানিয়ে যাবেন এবং কিছু না কিছু শনাক্তকরণের নথি সাথে রাখুন, যেমন আপনার আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্সের সাথে আপনার ঘরের ও আপত্কালীন যোগাযোগের নম্বর। এছাড়াও, আপনার আইডির সাথে একটি চিরকুটে লিখে রাখুন যে আপনার ডায়াবেটিস আছে এবং তাতে আপনার চিকিৎসকের আপত্কালীন নম্বরটিও দিয়ে দিন। এটি অবিলম্বে সাহায্য পেতে সুবিধা করবে এমনকি যদি আপনি কথা বলতে না পারেন ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে না পারেন তবুও।
2. দ্রুত কাজ করা গ্লূকোজ সাপ্লিমেন্ট সাথে রাখুন: ছোট একটা ক্যান্ডি, গ্লুকোজ ট্যাবলেট বা চিনি থাকা স্পোর্টস ড্রিঙ্কের মত এমন কিছু সাথে রাখুন যা চটপট কাজ করতে পারে। এটি আপনার রক্ত শর্করার স্তর একদম কমে যাওয়া থেকে আটকাবে। ব্যায়াম করার আগে, ব্যায়াম করাকালীন এবং ব্যায়াম করার পরে এক চুমুক খান।(3)
আরেকটি পরামর্শ- হাইপোগ্লাইসেমিয়ার আরেকটি সেরা সমাধান হল 3 টেবিল চামচ ক্যাস্টর সুগার।
3. শরীরচর্চার ধকল পরীক্ষা করুন: যদি আপনার 40-এর উপর বয়স হয়, তাহলে আপনার চিকিৎসকের সাথে শরীরচর্চার ধকল পরীক্ষা করার ব্যাপারে কথা বলুন। এটি এমন একটি পরীক্ষা যাতে ব্যায়ামের ধকলে আপনার হার্ট কীভাবে সাড়া দিচ্ছে তা আপনার চিকিৎসককে জানতে সাহায্য করে। আপনার হার্ট অস্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হওয়ার আগে কতটা ধকল নিতে পারছে এটি তা নির্ণয়ে বা ইসকেমিয়ার প্রমাণ খুঁজতে এবং আপনার সামগ্রিক সুস্থতা নির্ধারণে চিকিৎসককে সাহায্য করবে।
4. কার্ব খান: শরীরচর্চার আগে ও পরে শরীর যাতে পর্যাপ্ত শক্তি পায় তার জন্য আপনার শরীরের কার্বের ভান্ডার চাঙ্গা করে তোলা দরকার। শরীরচর্চার এক বা দুই ঘন্টা আগে এবং শরীরচর্চার দুই ঘন্টা পরে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ কোনো স্ন্যাক বা আহার খাওয়ার চেষ্টা করুন যাতে শক্তি ফুরিয়ে না যায়। আপনি যে স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটগুলি নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন সেগুলি হল কাঁচা মুগ, সবুজ মটরশুঁটি, আপেল, কুমড়ো এবং রাঙ্গালু।
শরীরচর্চা করার সময়
5. খুব খারাপ আবহাওয়া এড়ান: অত্যধিক গরম বা অত্যধিক ঠান্ডায় শরীরচর্চা করলে আপনার রক্ত শর্করার স্তর যথেচ্ছ ওঠানামা করতে পারে। কারণ আপনার শরীরকে নিয়মিত তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য স্বাভাবিক তাপমাত্রার তুলনায় প্রতিকূল তাপমাত্রায় আরও বেশি করে শক্তি জোগান দিতে হয়। এইরকম প্রখর আবহাওয়ায় বাইরে ব্যায়াম করবেন না, পরিবর্তে ভিতরে শরীরচর্চা করুন।
6. হাইড্রেটেড থাকুন: এটি প্রত্যেকের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আপনি ডায়াবেটিক হলে আরও বেশি করে জরুরী। আপনি যখন শরীরচর্চা করেন তখন শরীরের পক্ষে ঘামের সাথে শরীরের তরল হারানোটা স্বাভাবিক। তার মানে হল আপনার ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেশি থাকে, যা আপনার রক্ত শর্করার স্তরকে প্রভাবিত করতে পারে। শরীরচর্চার আগে, শরীরচর্চা করার সময় এবং শরীরচর্চার শেষে মনে করে জল খান।
7. ধকলপূ্র্ণ কার্যকলাপ এড়ান: যদি আপনার কোনো রকম চোখের রোগ, পায়ের পাতার সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি বা রক্ত শর্করার স্তর 250-300-র বেশি থাকে, তাহলে ধকলের ব্যায়াম এ়ড়ানোই ভালো। হাঁটা, জগিং করা, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে জগিং করা, অল্প একটু সাঁতার কাটা ইত্যাদির মত হালকা ব্যায়াম ধীরে করার চেষ্টা করুন। এতে আপনার রক্তচাপের স্তর খুব কমে যাওয়া থেকেও রোধ করা যায়।
8. আপনার শরীরকে মানিয়ে নিতে সময় দিন: শরীরচর্চা শুরু করার সময়, আপনার শরীর পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে সময় নেবে। সর্বদাই ধীরে ধীরে শুরু করা এবং আপনার শরীর মানিয়ে নিয়ে ব্যায়ামের মাত্রা বাড়ানো ভালো। আপনার পক্ষে কোনটি সেরা হবে জানতে আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলতে ভুলবেন না।
9. ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যায়ামগুলির ব্যাপারে সতর্ক হোন: এগুলি এমন ধরনের শরীরচর্চা যেখানে হয়তো আপনি ওজন তুলবেন, টানবেন বা ঠেলবেন। এইরকম শরীরচর্চায় আপনাকে প্রায়ই আপনার শ্বাস ধরে রাখতে হয়(2), এবং আপনার যদি রেটিনোপ্যাথি থাকে (3,4) তাহলে এটি বিপজ্জনক হতে পারে। এইরকম ব্যায়াম শুরু করার আগে আপনার নিয়মিত চিকিৎসক ও কোনো চক্ষুবিশেজ্ঞের সাথে কথা বলে নিন।
শরীরচর্চার পরে
10. আপনার শরীরের কথা শুনুন: সুস্থ থাকার জন্য আপনার শরীর আপনাকে কী কী লক্ষণ দেখাচ্ছে সেগুলি লক্ষ্য করতে ভুলবেন না। যদি আপনি কোনো রকম ব্যথা বা অস্বস্তি দেখেন, অবিলম্বে বন্ধ করে দিন। বিরতি নিন, জল পান করুন এবং স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিন।
ওয়ার্ম আপ ও কুল ডাউন করতে ভুলবেন না
কখনোই সঠিকভাবে ওয়ার্ম-আপ ও কুল-ডাউন করতে ভুলবেন না। এটি আপনার শরীরকে ব্যায়ামের জন্য প্রস্তুত করতে এবং ব্যায়াম করা হয়ে গেলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে সাহায্য করবে।(3)
আপনার ডায়াবেটিস থাকলে, নিয়মিত শরীরচর্চা করা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এমনভাবে সেটি করুন যাতে আপনার ঝুঁকি আরও জটিল না হয়ে ওঠে। কাজেই এর পরেরবার যখন আপনি জিমে যাবেন বা নতুন কোনো ব্যায়ামের রুটিন শুরু করবেন তখন এই পরামর্শগুলি মাথায় রাখুন।
তথ্যসূত্র:
(1) T E Keshel, R H Coker. Exercise Training and Insulin Resistance: A Current Review. Journal of Obesity & Weight Loss Therapy. 2015 Jul; 5(0 5): S5-003.
(2) S R Colberg, R J Sigal, B Fernhall, J G Regensteiner, et al. Exercise and Type 2 Diabetes. Diabetes Care. 2010 Dec; 33(12): e147–e167. doi: 10.2337/dc10-9990. PMCID: PMC2992225
(3) EXERCISING SAFELY WITH DIABETES by Meg Thompson, available at https://nfb.org/images/nfb/publications/vodold/vfal9804.htm
(4) E Atchison and A Barkmeier. The Role of Systemic Risk Factors in Diabetic Retinopathy. Current Ophthalmology Reports. 2016; 4(2): 84–89. Published online 2016 Mar 25. doi: 10.1007/s40135-016-0098-8