হার্ট ফেলিওর (HF) বা হার্ট বিকল হয়ে যাওয়াকে এমন একটি রোগ হিসেবে বর্ণনা করা হয় যাতে হার্ট কার্যকরভাবে রক্ত পাম্প করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলার জন্য শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না। এই রোগটি মূলত হার্টের সমস্যার সাথেই জড়িত; তবে কোনও কোনও সময় কিডনিও এর ফলে প্রভাবিত হয়ে থাকে।(1) নিঃসন্দেহে, ডায়েট এবং শরীরচর্চার মত জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাসও এই স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে জরুরী ভূমিকা পালন করে। HF-এও তার থেকে আলাদা কিছু নয়।(2) একটু বুদ্ধি করে আপনি কীভাবে আপনার দৈনিক খাবার গ্রহণের মাধ্যমেই হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারেন তার পরিকল্পনাটি এখানে দেওয়া হল।
আপনার যে যে নিউট্রিয়েন্টগুলির প্রয়োজন
সাধারণ সচেতনতা এবং অনুভূতি থেকে আমরা এমন ডায়েট গ্রহণের দিকে চালিত হই যাতে কম লবণ, ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল আছে। যাইহোক, তবে আমরা যা লক্ষ্য করছি বর্তমান পরিস্থিতি কিন্তু খুব একটা তার সাথে মেলে না। হার্ট বিকল হয়ে যাওয়া রোগীদের মধ্যে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ক্যালশিয়ামের সাধারণ ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। তার থেকেও বড় কথা হল, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, টাইটানিয়ামের মত অন্যান্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলির পরিমাণ কিন্তু হার্ট বিকল হয়ে যাওয়া রোগীদের মধ্যে কমতে দেখা গেছে। এই বিভিন্ন জরুরী নিউট্রিয়েন্টগুলির মধ্যে ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্ক হার্ট বিকল হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।(2)
ডায়েট সংশোধন
আপনি দৈনন্দিন যা খাওয়াদাওয়া করেন তা পাল্টে শরীরের চাহিদা পূরণের কয়েকটি সহজ উপায় নীচে দেওয়া হল:(1)
লবণ কম খান: শুধু রান্না করার সময় কম লবণ ব্যবহার করা নয়, বরং রান্না করা খাবারে লবণের পরিমাণ এবং কীভাবে খাবার কম লবণে রান্না করতে হবে সেটা বোঝাও গুরুত্বপূর্ণ। যেসব খাবারে লবণ কম থাকে সেগুলি হল দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, শুঁটি, টাটকা মাংস ও মাছ। রান্না করার সময় লবণের পরিমাণ কম ব্যবহার করতে খাবার ব্রয়েল, রোস্ট, গ্রিল, পোচ বা ভাপিয়ে নেওয়াই ভালো। ভাত, পাস্তা, দানাশস্য সেদ্ধ করা বা ফোটানোর সময় জলে লবণ দেবেন না। লবণ কমানোর আরেকটি সহজ উপায় হল হার্বস, রসুন, লেবুর রস ও পেঁয়াজের মত অন্যান্য স্বাদু জিনিস যোগ করা। ঘরে বা বাইরে খাওয়াদাওয়া করার সময়, দেখে নিন যে আপনি আচার, কাশুন্দি বা টার্টার সসের মত জিনিস দিয়ে খাবার চাখছেন না, যেগুলিতে মূলত লবণ অনেক বেশি থাকে। পরিবর্তে, পেঁয়াজ, লেটুস এবং টোম্যাটো ব্যবহার করে আপনার খাবারে স্বাদ আনুন। বাইরে খেতে গেলে, আপনি রাঁধুনিকে বলে লবণ কম করতে পারেন বা আপনার খাবার থেকে মোনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (MSG) বাদ দিতে পারেন।
টাটকা খান: ফল ও শাকসব্জীর মত টাটকা খাবারে স্বাদ আনার জন্য প্রায় সেরকম কোনও ঝালমশলা লাগে না এবং সেগুলি এমনিতেই খেতে সুস্বাদু লাগে। এগুলির মধ্যে প্রচুর বৈচিত্র্যও থাকে এবং মাত্র কিছু মশলা যোগ করেই সেগুলিকে আরও উপাদেয় করা যেতে পারে। তার থেকে বড় কথা হল, সেগুলি সহজেই আপনার শরীরের চাহিদামত জরুরী মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট প্রদান করতে পারে।
লেবেল দেখে নিন: আপনার খাদ্যাভ্যাস এবং পছন্দ নিয়ন্ত্রণ করার আরেকটি দারুণ উপায় হল খাবার কেনার সময় সেটি সম্পর্কিত বাস্তব তথ্য ও খাবারের লেবেল দেখে নেওয়া। আপনি যে খাবারটি কিনছেন তার পরিবেশন পিছু যেন 350 মিলিগ্রামের বেশি সোডিয়াম না থাকে তা দেখুন। আপনার শরীরে নিউট্রিয়েন্টগুলির দরকার আছে সেগুলি যেন আপনার খাবারেও থাকে। সর্বদাই ক্যালোরির মানের সাথে, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের মান কত তাও প্যাকেট থেকে পড়ে নিন।
একটু বিচক্ষণ হয়ে খাওয়া মানে এই নয় যে আপনি সুস্বাদু খাবার খেতে পারবেন না, বা পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সাথে বাইরে ডিনার করতে যেতে পারবেন না। তবে কয়েকটি সহজসরল পরামর্শ মেনে চললেই দেখবেন আপনি এমন স্বাস্থ্যকর, সম্পূর্ণ ও স্বাস্থ্যকর খাবার রান্না বা অর্ডার করতে পারছেন যা আপনার মুখেও রুচছে আবার মনেও আনন্দ আনছে।
সূত্র:
- University of California San Francisco. Diet and congestive heart failure [Internet]. [cited Jan 8 2020]. Available from: https://www.ucsfhealth.org/education/diet-and-congestive-heart-failure.
- Rothberg MB, Sivalingam SK. The New Heart Failure Diet: Less Salt Restriction, More Micronutrients. Journal of General Internal Medicine [Internet]. 2010 Oct 1 [cited 2020 Jan 30];25(10):1136–1137. Available from: https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2955483/